কান্নাজড়িত কণ্ঠে শ্রেয়ার মায়ের আকুতি !
সাদাকালো নিউজ
সময় দ্রুতই বইছে। কানাডার সড়কে প্রাণ দেয়া অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়ার কথাও মানুষের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে তার মা-বাবা ও একমাত্র ভাই শ্রেয়ার স্মৃতি বিন্দুমাত্র ভুলতে পারেননি। বরং দিন যত যাচ্ছে তাদের কষ্টের পাহাড় দীর্ঘ হচ্ছে।
বাসার কিছুটা দুরে নীরবে শুয়ে আছে শ্রেয়া। সেদিকটায় ছুটে যায় তাম মা। দূর থেকে দাঁড়িয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদেন। কারো পায়ের শব্দ পেয়ে আঁচলে মুখ ঢাকেন। এরপর আবার ছুটে আসেন বাড়িতে। মনোযোগী হতে পারেন না কোনো কাজেই। ভাবেন, এই বুঝি শ্রেয়া— মা বলে ডাক দিলো।
গেল ১৩ই ফেব্রুয়ারি কানাডার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় টরন্টোয় সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রেয়াসহ তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পরপারে পাড়ি দেন। অন্য দু’জন হলেন- আরিয়ান আলম দীপ্ত ও শাহরিয়ার খান মাহির। এ ঘটনায় গুরতর আহত হন আরও একজন শিক্ষার্থী। তিনি সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎপুত্র নিবিড় কুমার। দুর্ঘটনার সময় নিবিড় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শ্রেয়ার দেহ ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছায়। প্রথমে দেহ নেয়া হয় ফার্মগেটের মণিপুরি বাসায় এরপর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য নেয়া হয় মগবাজারের চার্চে। সেখানে প্রার্থনা শেষে বিকেলের দিকে ফার্মগেটের হলি রোজারি চার্চে অ্যাঞ্জেলাকে সমাহিত করা হয়।
মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় শ্রেয়ার মা। প্রতিটি ক্ষণ তার কাছে অসহ্য, যন্ত্রণার। কারণ এক মুহূর্তের জন্য প্রিয় সন্তানকে ভুলে থাকতে পারেন না তিনি। তার স্মৃতি আষ্টেপৃষ্টে এমনভাবে তাকে জড়িয়ে আছে যা কোনোভাবেই ভুলবার নয়।
শ্রেয়ার জন্মের কথা স্পষ্ট মনে আছে মা এডলিন মিতালি বাড়ৈ-এর। যেদিন সন্তানের জন্ম হয়েছিলো সেদিন চারদিকে হইচই পড়ে যায়। কন্যাসন্তানের মা হন মিতালি। তার দাদা বলতেন, বউমা তোমার মেয়ে একদিন অনেক বড় হবে। এই কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিতালি বাড়ৈই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, তার দাদার কথায় সত্যি হয়েছে। শ্রেয়া অনেক বড় হয়েছে। ওকে এখন সবাই চিনে। কিন্তু আমার বুক খালি। এই বুকের হাহাকার মিটাবে কে? মেয়ের সঙ্গে আমিও যদি চলে যেতে পারতাম, তাহলে শান্তি পেতাম। এই কষ্ট আর সইতে পারি না।
এভাবে আর কোনও মায়ের বুক যেন খালি না হয় উল্লেখ করে মিতালি বাড়ৈ বলেন, এভাবে আমার মেয়ের বিদায় নেয়ার কথা ছিলো না। গাড়ি চলানোর সময় সবাই একটু মনোযোগ দেবেন। তাহলেই দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। আমার মতো আর কোনও মায়ের বুক যেন খালি না হয়। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।