ওষুধ শিল্পের চাহিদা মেটাচ্ছে গরু-মহিষের হাড়
সাদাকালো নিউজ
২৫ বছর আগে সিরাজগঞ্জে গবাদি পশুর ফেলে দেওয়া হাড় সংগ্রহ করে সেগুলো গুঁড়ো করে বিক্রি শুরু করেছিলেন হাফিজুল শেখ। এসব হাড়ের গুঁড়ো আজ ব্যবহার হচ্ছে ওষুধ শিল্প থেকে শুরু করে জৈব সার, গবাদি পশু ও মুরগির খাবার তৈরির কাজে।
সেদিনের সেই ছোট্ট ব্যবসাটাও আজ রূপ নিয়েছে কারখানায়। সেখানে কাজ করছেন প্রায় ২০ জন নারী-পুরুষ। সারা দেশে থাকা ৫ থেকে ৬টি গবাদি পশুর হাড়ের কারখানার মধ্যে হাফিজুলের যমুনা বোন মিল কারখানা অন্যতম। নিজের কারখানা ও ব্যবসা নিয়ে হাফিজুল বলেন, ‘সারা দেশে ৫-৬টি হাড়ের কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে একটি। মহিষ ও গরুর হাড় ক্রয় করে সেগুলো গুঁড়ো করে খুলনার ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করি।’
প্রতিমাসে খুলনার ডিলারদের কাছে প্রায় ১০ লাখ টাকার হাড়ের গুঁড়ো বিক্রি করেন জানিয়ে হাফিজুল আরও বলেন, ‘খুলনার ব্যবসায়ীদের কাছে শুনেছি এই সব গুঁড়ো দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। হাড়ের গুঁড়োর চাহিদা অনেক। তবে অনেক সময় চাহিদা মতো গুঁড়ো সরবরাহ করতে পারি না।’
সরকারের সহযোগিতা পেলে এ শিল্পে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে জানিয়ে এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘আগের মতো এখন তেমন হাড় পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমাদের হাড়ের গুঁড়ো উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।’
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কালিয়া গ্রামে প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই হাড় গুঁড়ো তৈরির কারখানা। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া ও টাঙ্গাইল জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ফেলে দেওয়া হাড় সংগ্রহ করে কারখানায় প্রতিকেজি হাড় ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হাড়গুলো পরিষ্কার করে মেশিনের সাহায্যে গুঁড়ো করে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। প্রতিমাসে এই কারখানা থেকে প্রায় দুই ট্রাক হাড়ের গুঁড়ো কেনেন খুলনার ব্যবসায়ীরা।
হাফিজুলের যমুনা বোন মিল কারখানায় কাজ করে অনেকের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। এই কারখানার শ্রমিক চাম্পা ও আহের আলী জানান, তারা এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছেন। এতে প্রতিদিন তারা ৩৫০ টাকা করে পান। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনের আয়ের টাকা দিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলে।
একই ভাবে হাড় সংগ্রহকারী সোলায়মান হোসেন জানান, হাড় সংগ্রহের কয়েকজনের একটি দল রয়েছে। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে। দৈনিক প্রায় গড়ে ২০/২৫ কেজি হাড় সংগ্রহ হয়। এই হাড় বিক্রির টাকায় কোনো মতে সংসার চলে। তবে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় কসাইরা এখন আর আগের মতো হাড় ফেলে দেয় না। মাংসের সঙ্গেই বিক্রি করে দেয়। তাই এখন আগের মতো হাড় সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা।
হাড়ের গুঁড়ো কেনার অন্যতম বড় ক্রেতা খুলনার ব্যবসায়ীরা। তারা এই হাড়ের গুঁড়ো কিনে কী করেন এমন প্রশ্নের জবাবে খুলনার হাড়ের গুঁড়ো ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জানান, এই হাড়ের গুঁড়ো থেকে গবাদি পশুর ও মুরগির খাবার এবং ওষুধ কোম্পানিতে ক্যাপসুল তৈরির কভার তৈরি হয়। এ কারণে বিভিন্ন কোম্পানির লোকেরা এই হাড়ের গুঁড়ো কেনেন।
হাফিজুলের এই হাড়ের গুঁড়ো কারখানার বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘বিষয়টা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে না পড়লেও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ফেলে দেওয়া হাড় গুঁড়ো করে ওষুধ কোম্পানির কাছে তারা বিক্রি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাড়ের গুঁড়ো একটি প্রাকৃতিক জৈব সার, যা প্রাণীর হাড় থেকে উৎপাদিত হয়। সাধারণত গরু, ছাগল ও ভেড়ার হাড়কে নির্দিষ্ট আকারে গুঁড়ো করে এটি তৈরি করা হয়। হাড়ের গুঁড়োয় এমন উপাদান রয়েছে যা গাছের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’