এলজিইডি: কাল্পনিক প্রকল্পে অর্থ লুট
কাল্পনিক প্রকল্প বানিয়ে যে প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের দাবি, তিনি কোনো টাকা পাননি, এলজিইডি তার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কাজ দেখিয়ে বিল চেক প্রদান করে। পরে ওই টাকা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে উত্তোলন করে পুরোটাই তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম শাহাবুদ্দিনকে দেন। তদন্তকার্যে লিখিত ভাবে এমন সাক্ষ্য দেন পটুয়াখালী এলজিইডির ল্যাব সহকারী আমিনুল ইসলাম। অথচ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কলাপাড়া উপজেলার আন্দারমানিক নদীর উপর সেতু নির্মাণে অ্যাপ্রোচ সড়কে সয়েল টেস্টে তিনটি প্যাকেজ কোটেশন পদ্ধতিতে ঠিকাদার নিয়োগ করে শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন করে বিল দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ১১ জুন এমন মনগড়া একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে। তদন্ত কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দিন সেখ পটুয়াখালী এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে নিজ দপ্তরের দুর্নীতি ও জড়িতদের আড়াল করেছে তিনি।
অনুসন্ধান ও সূত্রমতে পৃথক দুটি দরপত্রে বিবিএম ও ইফতি এফটিসিএল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে কলাপাড়া উপজেলার আন্দারমানিক নদীর উপর নির্মিত ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর’ অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করে পটুয়াখালী এলজিইডি। এতে ব্যয় হয় ২২ কোটি, ৯৫ লাখ, ৫৯ হাজার, ৮২০ টাকা। ২০২১ সালের ৩০ মার্চ এ প্রকল্প শেষ করে জুনের মাঝদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আড়াই মাসের মাথায় অর্থাৎ ১৪ জুন অ্যাপ্রোচ সড়কে সয়েল টেস্ট দেখিয়ে পৃথক তিনটি কোটেশনে ‘জাহানারা সয়েল টেস্ট অ্যান্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের নামে ১১ লাখ, ৯৮ হাজার ৯শ টাকার বিল প্রদান করে নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম শাহাবুদ্দিন। এ প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, মূল প্রকল্প শেষ হওয়ার আড়াই মাস পর সয়েল টেস্ট হওয়ার সুযোগ নেই এবং সয়েল টেস্ট মূল প্রকল্প শুরু হওয়ার পূর্বে হবে। তাছাড়া সয়েল টেস্ট হলেও তাতে সর্বোচ্চ ব্যয় হওয়ার কথা এক লাখের মতো। নব্বই শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন-ওই প্রকল্পে কোনো সয়েল টেস্ট হয়নি।
অনুসন্ধান বলছে-অর্থ লুটে জড়িত প্রতিষ্ঠান ‘জাহানারা সয়েল টেস্ট অ্যান্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানটি ল্যাব সহকারী আমিনুল ইসলামের মায়ের নামে। যার মালিক আমিনুলের স্ত্রী মোসা. জোহরা বেগম। নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকল্প বাগিয়ে আত্মসাৎ হওয়া অর্থের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ পান আমিনুল। চাকরি নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজ দপ্তরে ঠিকাদারি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আমিনুলের বিরুদ্ধে। গড়েছেন ‘জাহানারা সয়েল টেস্ট অ্যান্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে এক প্রতিষ্ঠান। আমিনুলের মূল কর্মস্থল দশমিনা উপজেলার এলজিইডি কার্যালয়ে হওয়া সত্ত্বেও ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন জেলা কার্যালয়ে চাকরি করছেন।
২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর ভুয়া প্রকল্পে অর্থ লুটের ঘটনায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তর। প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী থেকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পটুয়াখালী এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মহির উদ্দির সেখকে। চলতি বছরের ২ এপ্রিল এক কার্যদিবসে তদন্ত দেখিয়ে প্রতিবেদন দেন তিনি। ওই তদন্তে তিনি বলেন-অভিযুক্ত প্রকল্পের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অভিযোগের সত্যতা পাননি। অথচ তৎকালীন সময়ে প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে দুদফা আবেদন করে অভিযুক্ত প্রকল্পের তথ্য চাওয়া হলে তা দেননি পটুয়াখালী এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মির আলী সাকির। তদন্ত কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দিন সেখের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি প্রতিবেদকের নাম্বার ব্ল্যাকলিস্ট করে দেন। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল ও খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।