মশা তাড়াতে লড়ছে সিটি করপোরেশন, অন্যরা হাত গুটিয়ে
সাদাকালো নিউজ
মশা ঠেকানোর সব দায়দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে রাজধানীর অন্য সব সেবা প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের একার নয়। বাস্তবে মশার বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন একাই লড়ে যাচ্ছে। অন্য কোনো সেবা সংস্থার তৎপরতা কিংবা উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এমন গাফিলতির কারণে এডিস মশা আরও নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে মানুষ, বাড়ছে মৃত্যুও।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। তবে ওই সব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে তদারকি করছে না। তারা এ কাজটা ঠিকঠাক করলে এডিস মশার বিস্তার এ পর্যায়ে যেত না।
সূত্র জানায়, মশক নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ অন্য সেবা সংস্থা ও নগরবাসীর। আদতে সিটি করপোরেশন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখে না। এমনকি এটা যে তাদের একটা দায়িত্ব, সেটাও তারা আমলে নিতে চাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ ফজলে রেজা সুমন বলেন, মেয়রদের একার পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। এ জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
মশা কমানোর সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। এর পর আছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদেরও অনেক স্থাপনা রাজধানীতে রয়েছে। কিছু স্থাপনা নির্মাণাধীন। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষেরও কিছু আবাসন প্রকল্প রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার পানির পাম্পগুলোতেও মশার উৎস পাওয়া যায়। বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানির মিটারের আশপাশে জমে থাকা পানিতেও মশার বংশবিস্তার ঘটে। রাজধানীতে চলমান সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প যেমন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের কারণেও বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরি হয়ে পানি জমেছে। সেগুলোও মশার উৎসস্থলে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের পাইপলাইনের আশপাশের শূন্য স্থানে পানি জমে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক স্থাপনাগুলোতেও মশার অস্তিত্ব পাচ্ছে সিটি করপোরেশন। রেলস্টেশনের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের বগি পড়ে থাকে। সেখানে বৃষ্টির পানি জমে মশার উৎস তৈরি হচ্ছে। এমনকি প্রায় প্রতিটি থানায় জব্দ করা গাড়ি পড়ে থাকে। ওই সব স্থান মশার বংশবিস্তারের উৎকৃষ্ট আধারে পরিণত হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেণ্ডারিয়া ও হাজারীবাগ থানার দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যুও হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, পুলিশ লাইন্স ও থানার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার থানাগুলোতে দায়িত্ব পালনকারী বেশ কিছু সদস্যসহ অর্ধশতাধিক পুলিশ এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল গোলাম মোস্তফা বলেন, রাজউক, রেলওয়ে, গণপূর্ত বিভাগ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশ বিভাগসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানেরই মশক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব আছে। তবে কেউই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, বছরের শুরুতে ডেভেলপারদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (রিহ্যাব) চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাদের সদস্যরা সারা ঢাকা শহরে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। সেখানে এডিস মশা পাওয়া যাচ্ছে। তারাও সক্রিয় বলে মনে হচ্ছে না।
রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিবারই আমরা রিহ্যাব সদস্যদের চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে বলি। এবারও বছরের শুরুতেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল (আজ) বোর্ড মিটিং আছে। সেখানে চূড়ান্তভাবে মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।’
রাজউকের বোর্ড সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) শামসুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, গত বছর রিহ্যাব সদস্যদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল মশা যাতে জন্ম নিতে না পারে সেভাবে সাইটের পরিবেশটা নিশ্চিত করতে। এবার চিঠি দেওয়া না হলেও রাজউক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করবে। পাশাপাশি ইন্সপেক্টরদের দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনগুলো তদারকি করবে। এ ছাড়া গণমাধ্যমে খুব শিগগিরই জনসচেতনতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির সমকালকে বলেন, ‘গত মে মাসে মেয়র রাজধানীর সব সেবা সংস্থা ও রিহ্যাব প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা কথা দিয়েছিলেন, তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে অনেক নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা পাচ্ছি। তাতে বোঝা যাচ্ছে, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি।’