ইভ্যালির হাজার কোটি টাকা গেল কোথায়?
জহুরা প্রিতু
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে— পরের ধনে পোদ্দারি। অর্থ্যাৎ অন্য লোকের টাকাপয়সা রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে, নিজেই মালিক বনে যাওয়া। এই প্রবাদটি সত্য প্রমাণ করেছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির মালিক মোহাম্মদ রাসেল।
রাসেলের গাদ্দারির শুরু ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। ওই সময় ইভ্যালির যাত্রার শুরুতে রাসেল দায়িত্ব নেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে।
রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন শুরু থেকেই ইভ্যালির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। বলা হয় ইভ্যালির প্রতারণায় রাসেলের প্রধান সহযোগীও তিনি। তাঁরা দুজনে মিলেই মাত্র তিন বছরেরও কম সময়ে ই-কমার্সের নামে প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহক আর পণ্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় হাজার কোটি টাকা।
শুরুতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ভাড়ায় একটি অফিস ও একটি গ্রাহক সেবাকেন্দ্র নিয়ে চালু হয় ইভ্যালি। এছাড়া ঢাকার অদূরে আমিনবাজার ও সাভারে ভাড়া করা জায়গায় দুটি গুদামও ছিল প্রতিষ্ঠানটির। যাত্রার অল্প সময়ের মধ্যেই ইভ্যালিতে নিয়োগ পান ২ হাজার কর্মকর্তা এবং ১৭০০ কর্মচারী।
তিন বছরের ব্যবসায় কোন লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। অথচ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলে নিতে ইভ্যালিতে নিয়মিত থাকতো বড় অংকের ছাড় আর ক্যাশব্যাক অফার। নতুন গ্রাহকের টাকা থেকে পুরাতন কিছু গ্রাহককে পণ্য দিলেও সেটা ছিলো নিতান্তই হাতেগোনা।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, ইভ্যালির বাকি টাকা কোথায়? গ্রাহকের করা প্রতারণা মামলায় রাসেল ও তাঁর স্ত্রীকে ধরে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসবাদে এই প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়েছে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল র্যাবকে জানিয়েছেন, ইভ্যালির ব্যাংক হিসাবে এখন আছে মাত্র ৩০ লাখ টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন লেনদেন মাধ্যমে আটকে আছে ইভ্যালির ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা, যেগুলোর মালিক গ্রাহকেরা।
র্যাব আরও জানতে পেরেছে, দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লস বানানোর নামে রাসেল শুরু করেন আয়েশি জীবন। মাত্র এক কোটি টাকার পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করে মাসে পাঁচ কোটি টাকা খরচ মেটাতেন কর্মীদের বেতন আর অফিস ভাড়া দিতে।
রাসেলের পরিকল্পনা ছিল — ইভ্যালিকে দক্ষিণ এশিয়ায় এক নামে চিনবে এমন একটি পরিচিতি তৈরি করা। বিদেশি একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আদলে প্রতারণার নীলনকশা করেন রাসেল।
এজন্য দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার করেছেন কাড়ি কাড়ি টাকার বিজ্ঞাপন। একইসঙ্গে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনে বড় অঙ্কের বিনিময়ে নামকরা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রিয় গায়ক, হালের তরুণ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের বানানো হয় ব্যান্ড এ্যাম্বাসেডর।
তিন বছরের ব্যবসায় এক পয়সাও মুনাফা করতে না পারা ইভ্যালি, বড় অঙ্কের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বিভিন্ন ঝমকালো অনুষ্ঠানে। রাসেল ও তাঁর স্ত্রী প্রত্যকে মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে বেতন নিতেন ইভ্যালি থেকে। প্রতিষ্ঠানের টাকায় কেনা দামি রেঞ্জ রোভার এবং অডি ব্র্যান্ডের দুটি গাড়ি ব্যবহার করতেন তাঁরা।
ইভ্যালিকে সারা বিশ্বে পরিচিতি এনে দিতে রাসেল বেশ কয়েকটি দেশও ভ্রমণ করেন। সুনাম বাড়াতে নিজের ঝুঁলিতে তুলেন একাধিক পুরষ্কার। আর এসব কিছুই রাসেল করেছেন গ্রাহক আর পণ্য সরবরাহকারীদের টাকায়।