আবারও গুম ও হত্যাচেষ্টায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
আবারও গুম-অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সতত্য যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান। গত সোমবার (১৯ আগস্ট) আদালতের নির্দেশে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেন মো. সোহেল রানা নামের ভুক্তভোগী ওই আইনজীবী।
মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিরা হলেন- আত্মগোপনে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৪), সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (৬৮), পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক (৪), সাবেক র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন।
এজাহারসূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৫ নম্বর সেক্টরের ১নং রোডের স্মাইল গ্যালারি নামের একটি শো-রুমের সামনে থেকে রাত ৮টার দিকে ওই আইনজীবী ও তার সঙ্গে থাকা বন্ধু মো. আশরাফুল ইসলাম রিংকুকে ১০-১১ জন বন্দুকধারী র্যাবের একটি স্টিকারযুক্ত গাড়িতে উঠিয়ে চোখ বেঁধে ও পিছমোড়া হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যায়।
মামলায় বলা হয়, সেদিন তাদের গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়ার পর গাড়ির ভেতর ওই বন্দুকধারীরা ডিজে গান চালিয়ে ভুক্তভোগীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। এমনকি ভুক্তভোগী আইনজীবী সোহেল রানার গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক ক্লিপ লাগিয়ে শক দেওয়া হয়।
গুমের শিকার ওই ভুক্তভোগী জানান, ঘণ্টাখানেক নির্যাতনের পর গাড়িটি একটা বিল্ডিংয়ের আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখা হয় এবং তাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে সবুজ পর্দার বেষ্টনী সম্বলিত একটি খুপড়ি ঘরে রাখা হয়। সেখানে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেককেই রাখা হয়েছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
এজহারে বলা হয়, সে সময় বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদে এক ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় খালেদা জিয়াকে গালমন্দ করে আর বলতে থাকে- এমন চরিত্রহীন মহিলার দল করছোস আর তোরা সরকার উৎখাত করবি। এই বলে ভুক্তভোগীর পুরষাঙ্গে ও কানের লতিতে ক্লিপ লাগিয়ে পুনঃরায় বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় এবং দুই হাতে রশির মাধ্যমে উপরের দিকে ঝুলিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত শক্ত বস্তু দিয়ে তাকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় করা মামলার তথ্য বলছে, দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে আটক থাকার পর ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন রাজশাহী গোদাগাড়ি এলাকায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ছাড়া পান ওই ভুক্তভোগী। ছাড়ার সময় কতিপয় ব্যক্তি তাকে বিএনপির রাজনীতি এবং আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত না থাকার শর্তে ছেড়ে দেয়। অন্যথায় তাকে পরিবারসহ চিরতরে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, ১নং আসামি শেখ হাসিনার হুকুমে এবং ২ থেকে ৫নং আসামিদের নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা দেশে একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতেই ভুক্তভোগী মো. সোহেল রানাকে গুমের নামে অপহরণ ও বিনাবিচারে আটকে রাখে।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী আইনজীবী মো. সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তাদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো সরকারই গুমের রাজনীতিতে জড়াতে না পারে এবং সেই সঙ্গে আমি গুম প্রতিরোধে সরকারের প্রতি আইন প্রণয়নের দাবি জানাই।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে আমরা সুষ্ঠু তদন্তের দিকেই যাচ্ছি। এ নিয়ে আমাদের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবাটুকুই দেবে।