অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়া কি কোণঠাসা হতে চলেছে?
সাদাকালো নিউজ
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আজ ১১তম দিন। ইউক্রেনে রাশিয়ার এই সামরিক হামলার বিপক্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ। এর ফলশ্রুতিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশগুলো রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে।
এতে করে রাশিয়ায় উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সরবরাহ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। শুধু রাশিয়ায় না, স্বাভাবিকভাবেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিশ্বব্যাপী। এদিকে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চলমান এই নিষেধাজ্ঞা বেশি দিন কার্যকর থাকলে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
এখন প্রশ্ন হল, অর্থনৈতিক এসব চাপ রাশিয়াকে কতটুকু কোণঠাসা করবে? আর এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে জানতে হবে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহে বিশ্বে দেশটির অবস্থান কততম।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরে তাঁর অবস্থান। দেশটিতে প্রতিদিন ১১ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয়। আর উৎপাদিত তেলের বেশিরভাগই রপ্তানি হয় ইউরোপে। পাশাপাশি কয়লা রপ্তানিতেও রাশিয়ার অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম। বছরে দেশটিতে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদিত হয়।
গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া এককভাবে সমগ্র ইউরোপের গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ করে চলছে। তাই বলা যায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের পর ইউরোপের দেশগুলোর বিরুদ্ধে দেশটির প্রধানতম রক্ষাকবচ গ্যাস রপ্তানি। কিন্তু যেভাবে শক্তিধর দেশগুলো রাশিয়াকে আর্থিকভাবে কোণঠাসা করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে, তাতে সব পক্ষই গ্যাসের সরবরাহ ও দাম নিয়ে সমস্যায় পরবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। অস্ট্রেলিয়া ও চীনের পরেই দেশটির অবস্থান। এছাড়া, রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত হীরা উৎপাদনকারী কোম্পানি আলরোসা গত বছর একাই বিশ্বের ৩০ শতাংশ হীরা উৎপাদন করেছে, যার অধিকাংশ রপ্তানি হয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে।
বিশ্ব ইস্পাত অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইস্পাতের ৪ শতাংশ সরবরাহ করে রাশিয়া, যার বেশিরভাগ রপ্তানি হয় ইউরোপে। এছাড়াও রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রুসাল বিশ্বের মোট উৎপাদিত অ্যালুমিনিয়ামের প্রায় ৬ শতাংশ করে সরবরাহ করে।
এর বাহিরেও, বিশ্বের প্রধান গম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে রয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এবং দুই দেশ মিলে একত্রে বৈশ্বিক গম রপ্তানির ২৯ শতাংশ পূরণ করে। যার অধিকাংশ যায় কৃষ্ণসাগরের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন সীমান্তবর্তী আজভ সাগরে পণ্যবাহী জাহাজের চলাচল ইতিমধ্যেই বন্ধ রয়েছে। যার কারণে ব্যাহত হচ্ছে খাদ্যপণ্যসহ সকল ধরনের পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া।
তাই বলা চলে, প্রায় সব ধরনের পণ্য রপ্তানি নিয়েই সংকটের মুখে রাশিয়া। কেননা, চলমান এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে আমদানিকারকেরা রাশিয়ার সাথে অর্থ লেনদেনে বাধার মুখে পড়েছেন। এদিকে পশ্চিমা জোটের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে অনেক দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে পণ্য কিনতে ভয়ে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, চলমান এই নিষেধাজ্ঞা বেশি দিন ধরে কার্যকর থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আমদানিকারকদেশগুলো রাশিয়া ছেড়ে বিকল্প সরবরাহ খুঁজতে শুরু করবে। যা সামগ্রিকভাবে রাশিয়াকে আরও কোণঠাসা করে তুলবে।