সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করতে হবে
সাদাকালো নিউজ
দেশে সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধ করতে হলে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। আমান ইন্দোনেশিয়ার কারিগরি সহযোগিতায় ‘প্রিভেন্টিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম (পিভিই): অ্যাপ্রোচেস অন জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং’ শীর্ষক আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বেসরকারি সংস্থা অন্তর-এর উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার মহাখালীতে ব্রাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত কর্মশালাটি শেষ হয় রোববার। কর্মশালায় অংশ নিয়ে বক্তারা আরও বলেন, সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশ নেয়ার জন্য নারীর সক্ষমতা তৈরি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের প্রতি সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তাঁরা।
এসময় জানানো হয়, সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধের জন্য লৈঙ্গিক সমতায়নের জন্য সুশীল সমাজের সক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে চলমান কাজের সঙ্গে লৈঙ্গিক সমতায়ন পদক্ষেপ সংযুক্ত করতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশে সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় সুশীল সমাজের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং তাঁদের শক্তিশালী ভূমিকার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়।
কর্মশালায় সহিংস চরমপন্থা বিষয়ক বিভিন্ন আইন, সনদ, কর্মকাণ্ড, প্রধান চালিকা, চ্যালেঞ্জ, দৃষ্টান্তমূলক ভালো চর্চাসমূহ তুলে ধরা হয়। এসব বিষয়ে আরও গভীর গবেষণা, অধ্যয়ন ও জ্ঞান বিনিময় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অংশগ্রহণকারীরা।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন অন্তর-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা এমরানুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় সুশীল সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্য ও গবেষণা এবং পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মশালাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সহিংস চরমপন্থা বিষয়ে জেন্ডার অন্তর্ভূক্তিকরণ ও সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা, কাজের ক্ষেত্র ও চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন উন্নয়ন পরামর্শক ও নীতি বিশ্লেষক শাহীন আরা বেগম। আর সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে ধর্মীয় প্রেক্ষাপট, নারীর মূলধারাকরণ ও সম্পৃক্তকরণ, ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা তুলে ধরেন আইআইটি, ইউএসএ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ (বাংলাদেশ) ড. এম আব্দুল আজিজ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও পরিচালন) এ কে এম হাফিজ আক্তার তাঁর বক্তব্যে সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সম্পৃক্ততার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে সরকার, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম, এক হয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের বার্তা প্রধান মামুন আব্দুল্লাহ ।
কর্মশালার সমাপনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. মো. আব্দুল করিম বলেন, “সহিংস চরমপন্থা একেবারে নির্মূল করা যাবে না। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যেম নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজ, পরিবার, গণমাধ্যম সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।”
অন্তর -এর উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় কর্মশালার প্রথম দিন আরও বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর উপাচার্য প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি সরদার এম আসাদুজ্জামান, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর গবেষণা বিশ্লেষক ফয়সাল বিন মজিদ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. পিজুয়ার হোসেন, সোস্যাল এইড-এর সমন্বয়ক ইসহাক এম সোহেল এবং আপন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. আফতাবুজ্জামান। এতে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, যুব সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, অন্তর, একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা; যার লক্ষ্য একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা।