যেসব বাংলাদেশি নারী তারকারা একাধিক বিয়ে করেছেন
জহুরা প্রিতু
বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে নারী তারকারা সমান গতিতে এগিয়ে চলেছেন পুরুষদের পাশাপাশি। কেউ বড় পর্দায়, কেউ ছোট পর্দায় কেউবা দ্যুতি ছড়াচ্ছেন গানের জগতে। নাটক বা সিনেমায় গল্পের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত চরিত্র বদলান তারা। করতে হয় প্রেম আর বিয়েও। তবে, বাস্তব জীবনেও বেশ কয়েকজন নারী তারকা রয়েছেন, যাদের একাধিক বিয়ে। চলুন জেনে নিই সেই সব নারী তারকার বিয়ের গল্প।
রুনা লায়লা। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী। এখন পর্যন্ত তিনবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। তার প্রথম বিয়ে খাজা জাভেদ কায়সার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। দ্বিতীয় বিয়ে করেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে। সর্বশেষ তিনি ঘর বাঁধেন বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান নায়ক আলমগীরের সঙ্গে।
বাংলাদেশের সংগীতের আরেক কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন। প্রথমে বিয়ে করেছিলেন একজন ব্যাংক ম্যানেজারকে। সেই সংসারে তাদের একটি মেয়ে আছে। বেশিদিন টেকেনি সে সংসার। এরপর গায়িকা বিয়ে করেন কলকাতার গায়ক সুমন চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি কবির সুমন নামেও পরিচিত।
কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী প্রথমে ভালোবেসে বিয়ে করেন। স্বামী গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক নকীব খান। মতের মিল না হওয়ায় ভেঙে যায় সে সংসার। পরে সামিনা চৌধুরী বিয়ে করেন অনুষ্ঠান নির্মাতা এজাজ খান স্বপনকে।
এক সময়ের মিষ্টি নায়িকা কবরী সারোয়ার। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন প্রযোজক চিত্ত ঘোষের সঙ্গে। বেশিদিন স্থায়ী হয়নি সে সংসার। ১৯৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী শামীম ওসমানের চাচা বাবু সারোয়ারকে বিয়ে করেন এই নায়িকা। ৩০ বছর ঘর করার পর নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে দ্বন্দ্বে ২০০৮ সালে কবরীকে তালাক দেন বাবু সারোয়ার।
প্রয়াত চলচ্চিত্র নায়িকা পারভীন সুলতানা দিতি। প্রথমে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। এ দম্পতির দুই সন্তান। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর দিতি বিয়ে করেন জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে। সে সংসারও টেকেনি। দীর্ঘদিন একা থাকার পর ২০১৬ সালে ক্যানসারে মারা যান দিতি।
১৯৮৪ সালে কিংবদন্তি খল অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীকে বিয়ে করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। ২৪ বছর সংসার করেন তারা। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০০৮ সালে হুমায়ুন ফরিদীকে তালাক দেন সুবর্ণা। এরপর তিনি বিয়ে করেন নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদকে। সুর্বণার চেয়ে ১৪ বছরের ছোট সৌদ। তার সঙ্গেই বর্তমানে ঘর করছেন।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা সূচরিতা। এই নায়িকা প্রথমে বিয়ে করেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন হিরো নায়ক জসিমকে। অল্প কিছুদিন সংসার করেন তারা। জসিমের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর সূচরিতা বিয়ে করেন প্রযোজক কে এম আর মঞ্জুরকে।
১৯৯৯ সালে কলকাতার চিত্রনির্মাতা রিঙ্গোকে বিয়ে করেন শমী কায়সার। দুই বছর টেকে সে সংসার। এরপর শমী বিয়ে করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনীতিক মোহাম্মদ এ. আরাফাতকে। ভেঙেছে সেই সংসারও। শমী এখন সংসার করছেন রেজা আমিন সুমনের সঙ্গে। গত বছর অক্টোবরে তৃতীয় বিয়ে করেন তিনি।
ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ ছিলেন প্রয়াত তাজিন আহমেদ। এই অভিনেত্রী প্রথমে বিয়ে করেন নাট্য পরিচালক এজাজ মুন্নাকে। টেকেনি সে সংসার। এজাজ মুন্নার বিরুদ্ধে তাজিন নেশাগ্রস্ত ও পরকীয়ার অভিযোগ তুলে তালাক দেন। এরপর তাজিন বিয়ে করেন এক মিউজিশিয়ানকে।
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ ও সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। তাদের ঘরে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সে সংসার। ইমনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিজরী বিয়ে করেন অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারকে।
এক সময়ে জনপ্রিয় গায়িকা ডলি সায়ন্তনী। প্রথমে বিয়ে করেন বিশিষ্ট গীতিকার রিজভীকে। সেই ঘরে ডলির দুটি কন্যাসন্তান। তারপরও সংসার টেকেনি। এরপর ডলি বিয়ে করেন গায়ক রবি চৌধুরীকে। টেকেনি সে সংসারও। বর্তমানে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘর করছেন এই গায়িকা।
২০০৭ সালে জাপান প্রবাসী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাসির আহমেদকে বিয়ে করেন অপি করিম। বছর না গড়াতেই ভেঙে যায় তাদের সংসার। এরপর অপি প্রেম করে বিয়ে করেন নাট্যনির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলকে। দ্বিতীয় সংসারও টেকেনি। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝরকে বিয়ে করেন অপি করিম।
সমালোচিত মডেল ও অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভার প্রথম বিয়ে হয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর সঙ্গে। বিয়ের পর সাবেক প্রেমিক রাজিবের সাথে কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে প্রভাকে তালাক দেন অপূর্ব। পরে মাহমুদ শান্ত নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন প্রভা। সেই সংসারও টেকেনি। প্রভা এখন সিঙ্গেল।
নওশীন নেহরিন মৌ। এই অভিনেত্রী মিডিয়ায় কাজ শুরু করার আগেই একবার বিয়ে করেন। টেকেনি সে সংসার। অভিনয়ে আসার পর নওশীন সম্পর্কে জড়ান অভিনেতা হিল্লোলের সঙ্গে। একপর্যায়ে হিল্লোল তার প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী তিন্নিকে তালাক দিয়ে বিয়ে করেন নওশীনকে।
মডেল ও অভিনেত্রী সুজানা জাফর। ২০০৬ সালে প্রথম বিয়ে করেন। স্বামী একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ। চার মাসের মাথায় ভাঙে সে সংসার। এরপর তিনি ২০১৫ সালে নিজের থেকে সাত বছরের ছোট গায়ক হৃদয় খানকে বিয়ে করেন। মাত্র চার মাস পরে ভাঙে সে সংসারও।
২০০৮ সালে অভিনেত্রী নাদিয়া বিয়ে করেন অভিনেতা মনির খান শিমুলকে। পাঁচ বছর পর তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০১৫ সালে হয় তালাক। এরপর ২০১৬ সালে নাদিয়া বিয়ে করেন অভিনেতা নাঈমকে। বর্তমানে তার সঙ্গেই সংসার করছেন।
২০০৬ সালে গায়িকা নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি বিয়ে করেন ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভকে। ২০১২ সালে তাদের সংসারজীবনের ইতি ঘটে। পরে ২০১৩ সালে ন্যান্সি নাজিমুজ্জামান জায়েদ নামে একজনকে বিয়ে করেন। সে সংসারেও বিচ্ছেদ। নতুন করে তিনি তৃতীয় বিয়ে করেছেন অনুপম মিউজিকের চিফ অপারেটিং অফিসার এবং গীতিকবি মহসীন মেহেদীকে।
২০০৯ সালে নায়িকা ময়ূরী টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মিলনকে বিয়ে করেন। ২০১৫ সালে মিলন মারা যান। এরপর তিনি শ্রাবণ শাহ নামে এক অভিনেতাকে বিয়ে করেন। কিছুদিনের মধ্যে ভাঙে সে ঘর। ২০১৭ সালে শফিক জুয়েল নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষককে বিয়ে করেন ময়ূরী। বর্তমানে টঙ্গীতে তার সঙ্গেই সংসার করছেন এই নায়িকা।
নানা শামসুল হক গাজীর তথ্যমতে, পরীমনি এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছেন। প্রথম বিয়ে হয় বরিশালে থাকা খালাতো ভাই ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। সেখানে দুই বছরের দাম্পত্য জীবনের পর বিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয় স্বামী কেশবপুরের ফুটবলার ফেরদৌস কবীর সৌরভ। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের এক বিনোদন সাংবাদিককে বিয়ে করেন। পরের বছর ভালোবাসা দিবসে ভেঙে যায় সেই বিয়ে। ২০২০ সালে তিন টাকা কাবিনে বিয়ে করেন নির্মাতা কামরুজ্জামান রনিকে। একই বছর তাদের বিচ্ছেদ হয়।
সবশেষ নিজের দ্বিতীয় বিয়ে সেরেছেন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। ২০১৬ সালের ২৪ মে হুট করেই বিয়ে করেন সিলেটের ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপুকে। পাঁচ বছরের সেই সংসারের ইতি টানেন চলতি বছরের মে মাসে। এরপর চার মাস না পেরুতেই আবারও গাটছড়া বাঁধেন বাংলা চলচ্চিত্রের অগ্নি-খ্যাত নায়িকা মাহি। তাঁর এবারের স্বামী কামরুজ্জামান সরকার রাকিব।
ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম। এই শিল্পী করেছেন একাধিক বিয়ে। প্রথম স্বামী আবদুর রশীদ সরকার। পরে মমতাজ বেগম মোহাম্মদ রমজান আলীকে বিয়ে করেন। সবশেষ মমতাজ বেগম বিয়ে করেন মইনউদ্দিন হাসান চঞ্চলকে।
একাধিক বিয়ে করেছেন কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা। ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে তার প্রথম বিয়ে হয় দিনাজপুর-৬ আসনের সরকার দলীয় এমপি শিবলী সাদিকের সঙ্গে। ২০১৬ সালে সেই সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে। ২০১৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর আইনজীবী সানাউল্লাহ নূরে সাগরকে বিয়ে করেন সালমা।