বাণিজ্যের আড়ালে টাকা পাচার করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা
সাদাকালো নিউজ
বড় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের আড়ালে টাকা পাচার করেছেন। আগে ব্যাংক খাতে এ বিষয়টি ভালোভাবে দেখা হতো না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ির পর ব্যাংকাররা এখন এদিকে নজর দিচ্ছেন। এর ফলে অর্থপাচার অনেকটাই বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।
সোমবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যাংক খাতে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। ডলারের বাজার পুরোপুরি ঠিক না হলেও আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়েও আমানত বেড়েছে। ঋণে প্রবৃদ্ধি আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। তবে এই খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ।
সংবাদ সম্মেলনে এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বলেন, করোনা মহামারির ধাক্কা বাংলাদেশ ভালোভাবে সামলে নিয়েছিল। পরবর্তীতে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সব জিনিসের দর বেড়ে যায়। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। তবে চাপ ধীরে-ধীরে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এর মানে ব্যাংক খাত একেবারে ঠিক হয়ে গেছে তেমন নয়। আবার সব এলসি খুলতে পারছে, তাও নয়। তবে গত বছরের তুলনায় পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের যে অর্থনৈতিক সংকট আছে তা সামলাতে আমাদের আরও সময় লাগবে। আমরা এখনও অনেক গরিব দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে অনেক নীচে আমরা। আমাদের দেশ ছোট অর্থনীতির।
এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, বাণিজ্যনির্ভর মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি আগে ভালোভাবে দেখা হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির পর এখন বোঝা যাচ্ছে, বড় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের আড়ালে অনেক টাকা পাচার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে এখন ব্যাংকাররা এসব ভালোভাবে দেখছে। এ নিয়ে গভর্নর বারবার বলছেন, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার প্রায় বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, মাঝে কিছু ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন এবং ডলার বিক্রির ফলে টাকা তারল্যের ওপরও চাপ তৈরি হয়। যে কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করেছিল। ব্যাংক খাতের সংকট কিছুটা কেটেছে। তবে আমরা সংকট থেকে এখনও পুরোপুরি উত্তরণ হতে পারেনি। সংকটের মধ্যেও কোনো ব্যাংকের আমানতকারী টাকা তুলতে পারেনি এমন হয়নি। তারল্য ব্যাংক খাতের কোন চ্যালেঞ্জ নয়, এই সংকট দূর হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। যে কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম আছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। নানা কারণে সহজে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। খেলাপি ঋণের সঙ্কট কোনো ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক একা সমাধান করতে পারবে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখানে আইনি সংস্কারের দরকার আছে। আদালত ও বিচারক সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর্থিক বিষয়ে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোর নীতি প্রয়োগ করতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন বলেন, বাংলাদেশে মুদ্রা সরবরাহই উচ্চ মূল্যস্ফীতির একমাত্র কারণ বলে মনে হয় না। এখানে সরবরাহ ব্যবস্থায় সংস্কারের দরকার আছে। কেননা, এখন তো বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমছে। অথচ আমাদের চিনি কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। আগামী জুলাই থেকে বাংলাদেশে সুদহারের নতুন ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। তবে এখানে সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করলে সমস্যা আছে। আবার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে কোথায় গিয়ে ঠেকবে বোঝা দায়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে ধীরে-ধীরে বাজারভিত্তিক করছে সেটি ভালো পন্থা।
রেমিট্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের ডলারের শুধু দাম নির্ধারণ করলেই হবে না রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কী ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাও দেখতে হবে। প্রবাসীরা এয়ারপোর্টে ভালো সুবিধা পান না, তাদের কোনো ধরনের কাজ শেখানো হয় না। অন্যান্য দেশে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করা হয়। যা আমাদের দেওয়া হয় না। এতে প্রবাসীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মাশরুর আরেফিন বলেন, করোনার পর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ কেন্দ্র করে চলা অর্থনৈতিক মন্দায় কাটিয়ে উঠতে শুরু করছে ব্যাংকিং খাত।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বেড়েছে। এখন ডিপোজিট বেড়েছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। রেমিট্যান্সে ডলারের রেট ৮৭ টাকা থেকে ১০৮ টাকা হয়েছে। আমাদের তারল্য সাময়িক সংকট দেখা দিয়েছিল তবে এখন অতিরিক্ত তরল্য রয়েছে। পুরো ব্যাংক খাতে এখন অতিরিক্ত এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা তারল্য রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী এবং এবিবির ট্রেজারার ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি মো. আহসানুউজ জামান।