চালের মজুত পর্যাপ্ত, কারসাজি না হলে বাড়বে না দাম
সাদাকালো নিউজ
চাল রপ্তানিতে ভারত একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করছে। সম্প্রতি মিয়ানমারও রপ্তানি বন্ধের আভাস দিয়েছে। এতে উদ্বেগ বাড়ছে চাল আমদানিকারক দেশগুলোতে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এর কোনো আঁচ লাগেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। বাজারে প্রভাব পড়বে না।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, বোরো ফলন ভালো হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। এই চাল শেষ হওয়ার আগেই কৃষকের ঘরে উঠবে আমন ফসল। তাই আমদানির প্রয়োজন হবে না। সরকারের এমন বক্তব্যকে সমর্থন করছেন চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দেশে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ ধান ও চাল মজুত আছে, তাতে কোনো দেশ রপ্তানি বন্ধ করলেও প্রভাব পড়বে না। ভোক্তা অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তারাও মনে করেন, কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কারসাজির চেষ্টা না করলে বাজার অস্থির হবে না।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে মোট চালের ৪০ শতাংশই সরবরাহ করে দেশটি। অভ্যন্তরীণ বাজার স্বাভাবিক রাখতে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ভারত আতপ চাল (নন-বাসমতী হোয়াইট রাইস) রপ্তানি বন্ধ করে। গত শুক্রবার নতুন করে সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। ভারত সরকার বলেছে, ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত এ শুল্ক বহাল থাকবে। নিজেদের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানিতে শিগগিরই সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা করছে মিয়ানমারও। তবে দেশটির রপ্তানি কম। এসব সিদ্ধান্তে কিছুটা অস্থির হয়ে উঠছে চালের আন্তর্জাতিক বাজার।
উৎপাদন ভালো হলেও বাংলাদেশকে প্রতিবছর চাল আমদানি করতে হয়। এর বেশির ভাগই আসে ভারত থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
মাসখানেক ধরে দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ও তেজকুনিপাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা তথা গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি জাতের চালের কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি (পাইজাম, লতা ও বিআর-২৮ জাত) চাল ৫৩ থেকে ৫৬, চিকন বা মিনিকেট চালের কেজি মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চাল কিনতে ক্রেতাকে কেজিতে খরচ করতে হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।
চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করুক কিংবা শুল্ক আরোপ করুক কোনোটিতে দেশের বাজারে প্রভাব পড়বে না। কারণ কৃষক ও মজুতদারদের কাছে পর্যাপ্ত চাল আছে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, বড় ব্যবসায়ীদের কাছে যে চাল রয়েছে, সেগুলোই তো বিক্রি হচ্ছে না। আমদানি করে কী করবে। আমন ধান উঠলে চালের সরবরাহ আরও বাড়বে।
বেসরকারি মজুতের পাশাপাশি সরকারের মজুতও ভালো। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকারের কাছে বর্তমানে চালের মজুত রয়েছে ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৩৩ টন ও ধানের মজুত রয়েছে ৬৬ হাজার ৫২৫ টন। খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ভারতের শুল্ক আরোপে বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে না।