আল-আকসা মসজিদ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ!
সাদাকালো নিউজ
আরবি ভাষায় আল আকসা শব্দের অর্থ ‘অনেক দূর’। পবিত্র এই মসজদটি জেরুজালেমের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। মক্কা এবং মদিনার পরে মুসলিমরা এ স্থানকে অধিক সম্মানের চোখে দেখেন।
পবিত্র কুরআনের সূরা বনিইসরায়েলের ১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, পবিত্র ও মহীয়ান তিনি যিনি তার বান্দাকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি কল্যাণময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
এই আয়াতে মূলত নবী কারিম সা. কে মক্কা থেকে মসজিদ আল আকসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ঊর্ধ্ব আকাশে গমনের আগে এখানে তিনি নামাজ পড়িয়েছিলেন।
ইসলামের তথ্যানুসারে, মদিনা থেকে নবী কারিম সা. এর যাত্রা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এটি ঘটেছিল আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শনের মাধ্যমে। রাসূল সা. জেরুজালেমের মসজিদ আল আকসায় পৌঁছানোর পর সেখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে গমন করেন।
রাসূল সা. এমন এক সময় মেরাজে গিয়েছিলেন যখন তিনি ধর্ম প্রচারের জন্য নিজ গোষ্ঠী এবং পরিবারের লোকের দ্বারা অপমান এবং নির্যাতনের শিকার হতেন।
পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন আয়াত এবং হাদিসে মসজিদ আল আকসার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে দুটি মসজিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো মক্কার মসজিদ আল হারাম এবং অন্যটি জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদ আল আকসা। পবিত্র কাবার আশেপাশের এলাকাকে আল হারাম বলা হয়। যেখানে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে আল্লাহ’র পবিত্রতা ঘোষণা করেন। পবিত্র কাবাকে আল্লাহর ঘর বলা হয়। একইভাবে পবিত্র কুরআনে আল আকসা মসজিদকে বায়তুল মাকদিসের কেন্দ্র হিসাবেও বর্ণনা করা হয়েছে, যার অর্থ ‘পবিত্র ভূমি’ এবং ‘বারাকাহ ভূমি’ বা পরিত্রাণ ও শান্তির দেশ।
কুরআনে আল আকসা এবং এর আশেপাশের এলাকাকে ‘বরকতময়’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, “আর্শীবাদপুষ্ট ভূমি” শব্দের অর্থ এমন একটি ভূখণ্ড যার উপর মহান আল্লাহ শারীরিক ও আধ্যাত্মিক অনুগ্রহ দান করেছেন যেখান থেকে সমস্ত সৃষ্টি লাভবান হতে পারে।
নবীদের ভূমি
পৃথিবীতে যেসকল নবী রাসূলগণ এসেছেন তাদের সবার সঙ্গে মসজিদ আল আকসার একটা সম্পর্ক ছিল। এজন্য এ মসজিদ মুসলিমদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া শেষ নবী রাসূল সা. নিজেও আল আকসা মসজিদের গুরুত্ব বর্ণনা করেন। রাসূল সা. যেদিন মেরাজে গমন করেন সেদিন মসজিদ আল আকসায় পৌঁছানোর পর তিনি ইমামতি করান। যেখান সকল নবীগণ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সূরা বাকারার ১৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের উপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তারই অনুগত’।
এছাড়া মসজিদ আল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা। আল্লাহর পক্ষ থেকে কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়ার নির্দেশ আসার আগে মসজিদ আল আকসা ছিল প্রথম কিবলা। যার দিকে ফিরে ইবাদাত করা হত।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, তিন মসজিদ ব্যতীত অধিক নেকীর আশায় অন্য কোনো মসজিদে সফর করা যাবে না। এগুলো- মসজিদ আল হারাম (মক্কা), মসজিদ আল নববী (মদিনা) এবং মসজিদ আল আকসা (জেরুজালেম)।
এজন্য বিশ্বের মুসলিশ সম্প্রদায় মসজিদ আল আকসাকে পবিত্র ভূমি মনে করেন। এছাড়া এ মসজিদের ওপর হামলাকে ইসলামের উপর হামলা বলে মনে করেন মুসলিম সম্প্রদায়।